Saturday, January 1, 2011

বুয়েটের স্টুডেন্টস এডভাইজার কাহিণীঃপর্ব-১

স্টুডেন্টস এডভাইজার ব্যাবস্থা সম্পর্কে কিছু কথাঃ

বুয়েটের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অনন্য দিক হলো এই স্টুডেন্টস এডভাইজার, অন্তত আমার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বন্ধুর কাছে কখনো শুনিনি তাদের স্টুডেন্টস এডভাইজার বলে কোন বস্তু আছে।"স্টুডেন্টস এডভাইজার" নামক "পদ্ধতি" চালু করার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের "নাজুক" অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটানো।বুয়েটে ঠিক কবে থেকে এই ব্যাবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে আমার জানা নেই।সম্ভবত বেশ অনেকদিন আগেই।তো এই স্টুডেন্টস এডভাইজার ব্যাবস্থা প্রবর্তন করার পরও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের যে রুপ দেখেছি গত ৫ বছর ধরে(বুয়েটে আমাদের কোর্সটি কিন্তু ৪ বছরের, তারপরও কি করে ৫ বছর থাকলাম সেটা অন্য গল্প), এই ব্যবস্থা প্রত্যাবর্তনের আগে ছাত্র শিক্ষকদের সম্পর্কের অবস্থাটা ঠিক কিরকম ছিল তা সাবেক বুয়েটিয়ানরাই ভালো বলতে পারবেন।
স্টুডেন্টস এডভাইজার ব্যাপারটা হলো বুয়েটে ভর্তি হওয়ার সময় প্রতি ৪ জন স্টুডেন্টের জন্য একজন করে শিক্ষক(প্রফেসর বা এসোসিয়েট প্রফেসর) নিযুক্ত করা হয়,যারা পরবর্তী ৫ বছর এদেরকে বিভিন্ন ব্যাপারে, বিশেষ করে প্রতি টার্মের রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে সাহায্য করবেন।ব্যাপারটাকে এভাবেও বলা যেতে পারেঃবুয়েটের প্রফেসর, এসোসিয়েট প্রফেসরদের হাতে প্রতি বছর নতুন ভর্তি হওয়া চারজন "কচি শিশু"কে তুলে দেয়া হয় যাদেরকে তিনি পরবর্তী ৪ বছর ইচ্ছামতো "দলাইমলাই" করার অধিকার রাখেন।অন্তত আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অনেকটা তাই ঘটেছিল।

আমার এডভাইজারের কথাঃ

আগে আমার সম্পর্কে বলে নিই, আমি পুরকৌশল বিভাগের '০৫ ব্যাচের ছাত্র।আমার এডভাইজারের নাম জানতে পারলাম যেদিন সোহরাওয়ার্দী হলে ভর্তি হলাম সেদিন।একটা লিস্ট থেকে এডভাইজারের নাম আর রুম নাম্বার জেনে নিয়ে গেলাম স্যারের সাথে দেখা করতে।প্রায় আধ ঘন্টা চেষ্টা করে স্যারদের রুম নাম্বার রহস্যের আংশিক সমাধান করে(সত্যি কথা বলতে কি সমাধানটা আমি একা করতে পারিনি,আমার সাথে আমার বড়ভাইও ছিলেন) স্যারের রুম খুঁজে পাওয়ার পর বুঝতে পারলাম, সেদিনকার মতো স্যারের সাথে দেখা করার অধিকার আমি হারিয়ে ফেলেছি।অর্থাৎ স্যার সেদিন তার সাথে দেখা করার জন্য ছাত্রদের সময় দিয়েছিলেন সকাল ৯টা-১০টা, আর আমি গিয়ে হাজির হয়েছিলাম ১২ টায়।স্যার তখন রুমে ছিলেন, দুমিনিটের কাজ, কিন্তু তাতে কি?গরু গাধাকে তো আর যখন তখন রুমে আসতে দেয়া যায় না, তাই না?
অগত্যা সেদিন স্যারের রুম চিনে এসে পরদিন সময়মতো(স্যারের বেঁধে দেয়া সময়,বিকাল ৪টা-৫টা) স্যারের রুমে গেলাম।চারটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর স্যার দৃশ্যপটে উদয় হলেন, অর্থাৎ রুমে এলেন।এরপর সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে অবশেষে স্যারের দরজায় পৌঁছালাম।এরপরের দৃশ্যাবলী ছিল অনেকটা এরকমঃ

আমি স্যারের দরজায় নক করলাম
স্যার বললেন "ভেতরে এসো।"
আমি গিয়ে বসলাম।এরপর স্যার আমাকে দুটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, "এখান থেকে কোর্সের নামগুলো দেখে এখানে লিখ।এগুলোই তোমার আগামী টার্মের কোর্স।খবরদার কোন ভূল করবেনা।" দুর্ভাগ্যবশত সামান্য এই কাজটি করতে গিয়েও এক জায়গায় ভূল করে ফেললাম।স্যার এটা দেখে বললেনঃ"তুমি কি সত্যি বুয়েটে চান্স পেয়েছ? আমার কিন্তু সেরকম মনে হচ্ছেনা।আমি যদি এখন ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চাকে একটা জিনিস দেখে দেখে লিখতে বলি, সে সেটা করতে পারবে।এটুকু যোগ্যতাও তো তোমার নেই।যাই হোক যেটা ভূল করেছ সেটা কেটে নিচে আবার লিখ।" এবার ঠিকমতোই লিখতে পারলাম।এরপর স্যার বললেন, "ঠিক আছে তুমি এস।"
আমার তখনো ধারনা ছিল, এডভাইজারের সাথে নিয়মিত দেখা করতে হবে এবং তাদের "এডভাইজ" মেনে চলতে হবে।তো আমি চলে আসার আগে স্যারকে জিজ্ঞেশ করলামঃ"আবার কবে দেখা করবো স্যার?" স্যার বললেন "তুমি আমার সাথে নেক্সট দেখা করবে যেদিন এই টার্মের রেজাল্ট দেবে সেদিন।তার আগে নয়।তার আগ পর্যন্ত তোমার সাথে আমার কোন ধরনের কোন সম্পর্ক নেই"। একটু টাশকি খেয়েছিলাম, কিন্তু আবার খুশিও হয়েছিলাম এই ভেবে, যে আর যাই হোক নিয়মিত বিরতিতে এই ব্যাঘ্রসমতুল্য এডভাইজারে মুখোমুখি হতে হবেনা !

এই টার্মের রেজাল্ট যেদিন, সেদিন আবার স্যারের কাছে গেলাম।দুর্ভাগ্য, সেদিনও আবার একই ব্যাপার ঘটলো অর্থাৎ অনেক আগেই আমি এডভাইজারের সাথে দেখা করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছিলাম।কেননা আমি স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম সকাল সাড়ে ১০টায়।কিন্তু অচ্ছুতদের জন্য স্যার সময় বরাদ্দ দিয়ে রেখেছিলেন সকাল ৯টা-১০টা।অগত্যা পরদিন আবার বরাদ্দকৃত সময়ের মধ্যেই স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম।যাওয়ার পর স্যার আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললেন, "এটা ফটোকপি করে আর হল থেকে রেজিস্ট্রেশন পেপার নিয়ে আবার এসো।তার আগে এখানে সাইন কর।" স্যারের ওখানে গিয়ে কোথাও সাইন করতে হতে পারে আমি ধারনা করতে পারিনি।সুতরাং কলম নিয়ে যাইনি।কিন্তু সাইন তো করতেই হবে।সুতরাং স্যারকে বললামঃ "স্যার, সাইন করবো কি দিয়ে? কলম আনিনি, কলম দিন।"
স্যার রাগে ফেটে পড়লেন। বললেনঃ "কি ধরনের ছাত্র তুমি?এই তোমার ছাত্রত্বের নমুনা? রেজাল্ট নিতে এসেছ আর একটা কলমও নিয়ে আসোনি? তোমার কি মনে হয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ তোমার জন্য তোমার জন্য খাতা কলম পেন্সিল সব নিয়ে বসে থাকবে?লজ্জা করেনা তোমার তুমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চলে এসেছ? তুমি কি নিজেকে ছাত্র ভেবে বসে আছ? পৃথিবীতে এমন কোন ছাত্র দেখেছ যার কাছে একটা কলম নেই? যত্তসব।"
তারপর স্যার অনেক কষ্ট করে নিজের পকেটে রাখা পার্কার পেনটা আমার হাতে তুলে দিলেন।সেটা দিয়ে সাইন করে চলে এলাম।তারপর বাকী কাজগুলো ঠিকমতোই করেছিলাম, সেখানে কোন ভূল করিনি।

এহেন এডভাইজারের সাথে পরবর্তীতে অনেকবারই আমার মোলাকাত হয়েছে।সেসব মোলাকাতের সবগুলোই আমার জন্য সুখকর ছিলনা।সেসব কথা পরের পর্বে বলবো, এক পর্বে সব কথা বলে শেষ করা যাবেনা।

7 comments:

  1. :(((( same here.. this system sucks!!

    ReplyDelete
  2. যতদিন ছাত্রদের উপর শিক্ষকদের এই অপরিসীম ক্ষমতা থাকবে, ততোদিন এই অত্যাচার থেকে ছাত্রদের রক্ষা নেই... :(

    ReplyDelete
  3. পল্টু সাহেব তো ব্লগার হইয়া গেলেন। ভালো চালিয়ে যান।লেখাটা সামু অথবা সচলে পোস্ট কইরা দেন।

    ReplyDelete
  4. কমেন্টানোর জইন্য ধইন্যাপাতা।সামুতে দিসি।শালারা প্রথম পাতায় দিবার চায় না।সামু থেইকা মুইছা সচলে দিমু কিনা ভাবতাসি।একইসাথে ব্লগস্পট আর সচলে দিলে কোন সমস্যা করবোনাতো?

    ReplyDelete
  5. পল্টু,এত সেন্টু খাইতেছ কেন? বুয়েটের স্যার রা যে এমন হবে সেটাই স্বাভাবিক। তারা নিজেরে বিশাল কিছু মনে করেন। আসলেই তারা বিশাল কিছু। এত্ত এত্ত ডিগ্রী তাদের।

    তুমি তাদের কাছ থেকে সাধারণ মানুষের ব্যাবহার আশা কর কেন? তবে সবাইকে এক কাতারে ফেলার মানে হয় নয়া। আমার অ্যাডভাইজার স্যার কিন্তু বেশ helpful.

    ReplyDelete
  6. সেন্টু ক্যান খাইসি এইটা পরের পুস্ট, মানে এইটার পর্ব দুই দেখলে বুঝবি।তবে এর ব্যাতিক্রম আছে এইটা সত্য কথা।অনেক এডভাইজারই পুলাপাইনরে অনেক হেল্প করে।
    তারা বিশাল মানুষ সেইটা বুঝলাম।তারা নিজেদের বিশাল মনে করবে তাতেও কোন দোষ নাই।সমস্যা হইল তারা কেন আমাদেরকে গরু ছাগল মনে করবে?

    ReplyDelete
  7. @অর্নব... কমেন্টানোর জন্য ধইন্যাপাতা...

    ReplyDelete