Thursday, January 13, 2011

বুয়েটের স্টুডেন্টস এডভাইজার কাহিণীঃপর্ব-২

গতপর্বে যেটুকু বলেছিলাম সেটুকুর ব্যাপ্তিকাল ছিল লেভেল-১ টার্ম-১ পর্যন্ত।এরপর লেভেল-১ টার্ম-২ মোটামুটি ঘটনাবিহীনভাবেই কেটে গেল বা কিছু ঘটলেও এখন মনে করতে পারছিনা।
এরপর আসি লেভেল-২ টার্ম-১ এর প্রসঙ্গে।এই টার্মে এসে বুয়েটে চালু হলো অনলাইন রেজিস্ট্রেশন।ব্যাপারটা হলো এরকম, ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি ওয়েবসাইট(পড়ুন ঠেলাগাড়ি) তৈরি করা হলো।সেখানে সবাইকে ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে দেয়া হলো যেটি দিয়ে তারা নিজেদের একাউন্টে ঢুকে চলতি টার্মের কোর্সগুলো রেজিস্ট্রেশন করবে।তারপর সেটি অনলাইনে(পড়ুন ঠেলাগাড়ির মাধ্যমে) এডভাইজারের কাছে চলে যাবে, এবং এডভাইজার সেটি ঠিক থাকলে ডিপার্টমেন্টাল হেড বরাবর পাঠিয়ে দেবেন।
পাঠক তাই বলে ভাববেন না তাহলে তো আর ছাত্রছাত্রীদেরকে তাদের এডভাইজারের সাথে দেখা করতে হচ্ছেনা।অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের পর সবাইকে নিজ নিজ এডভাইজারের সাথে দেখা করতে হবে, কেননা তা না হলে এডভাইজার বুঝবেন কিভাবে যে তার প্রানপ্রিয় ছাত্রটি স্বহস্তে রেজিস্ট্রেশন করেছে? প্রানপ্রিয় ছাত্রটি তার চাঁদবদন প্রদর্শন করার পরই কেবল এডভাইজার তার রেজিস্ট্রেশনটি ডিপার্টমেন্টাল হেড বরাবর পাঠাবেন, তার আগে নয়।
অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করার পর আমাকেও বলা হলো শীঘ্রই আমার এডভাইজারের সাথে দেখা করতে, নতুবা আমার রেজিস্ট্রেশন ফাইনাল হবেনা।গেলাম স্যারের সাথে দেখা করতে।স্যার রুমে নেই।এমনকি আমার জন্য কোন সময় বরাদ্দও দেয়া হয়নি।সেদিন স্যারের কাছে গিয়েছিলাম সকাল সাড়ে দশটায়।বিকালে আবার গেলাম(বিকাল ৪টা-৫টার মধ্যেই কারন এই সময়টুকুই সাধারনত গরু ছাগলদের জন্য বরাদ্দ থাকে) স্যারের রুমে, কিন্তু স্যার নেই।পরদিন আবার গেলাম সকাল ১০ টায়, আবার সেদিনই দুপুর ১২ টায়, বিকাল সাড়ে ৪ টায়।স্যারকে রুমে পেলাম না।এদিকে আমাকে বলে দেয়া হয়েছিল ৩ দিনের মধ্যে স্যারের সাথে দেখা করতে।দুদিন চলে গেছে, স্যারকে রুমে পাইনি।পরদিন আবার সকাল ১০ টায় স্যারের রুমে গেলাম, যথারীতি স্যার রুমে নেই।তারপর সেদিন আবার দুপর ২ টায় স্যারের রুমে গেলাম, এবারো স্যার রুমে নেই।এবার আর থাকতে না পেরে ডিপার্টমেন্ট অফিস থেকে স্যারের মোবাইল নাম্বার নিয়ে ফোন দিলাম।সেই ভয়াবহ ফোনালাপটি এবার বর্ণনা করছি।

আমিঃ স্লামালেকুম স্যার, আপনি কি স্যার আজ রুমে আসবেন?
স্যারঃ কে তুমি? (স্যারের রাগান্বিত গলা শুনে একটু ভড়কে গেলাম)
আমিঃ আমি স্যার মানে স্যার আপনি আমার এডভাইজার স্যার।
স্যারঃ এতো বড় স্পর্ধা তোমার কি করে হলো?
আমিঃ মানে স্যার?
স্যারঃ কত বড় স্পর্ধা তোমার তুমি আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেশ করছ আমি রুমে আসব কিনা? আবার মানে জিজ্ঞেশ করছ?
আমিঃ জ্বী স্যার... মানে স্যার...
স্যারঃ আমি রুমে আসি কিনা বা আসবো কিনা সেই কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?
আমিঃ না স্যার... মানে স্যার...
স্যারঃ আমি প্রতিদিন সকাল আটটায় রুমে আসি, রাত আটটা সময় রুম থেকে বের হই।এর মাঝখানে শুধু খেতে টয়লেট করতে আর নামায পড়তে বের হই।আর তুমি কিনা জানতে চাইছ আমি রুমে আসবো কিনা? তোমার কথায় মনে হচ্ছে আমি আমার রুমে আসিই না? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি ডিপার্টমেন্টের অতিথি!!! এতো বড় কথা বলার সাহস তুমি কোত্থেকে পেলে?
(ভয়ে বলতে পারিনি, আমি গত দুদিন তিনবেলা করে এসেও আপনাকে রুমে পাইনি)
আমিঃ সরি স্যার মানে স্যার আমি ঠিক বুঝতে পারিনি।
স্যারঃ এইতো, তোমাদের সমস্যাই হলো এটা।একজন শিক্ষকের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা তোমরা তোমাদের ফ্যামিলি থেকে শিখে আসোনা।আর কিছু একটা করেই বলে ফেল সরি।তুমি কি মনে কর এতো বড় বেয়াদবি করার পর সরি বলাই যথেষ্ট?
আমিঃ না স্যার, মানে স্যার আমি এক্সট্রিমলী সরি স্যার।আমি স্যার বিকাল ৫টায় আপনার রুমে আসবো স্যার।
স্যারঃ ঠিক আছে এসো।আর পারলে একজন শিক্ষকের সাথে কি করে কথা বলতে হয় সেটা শিখে এসো।
আমিঃ জ্বী স্যার, স্লামালেকুম স্যার।

তারপর আমি গেলাম টিউশনিতে।টিউশনি থেকে এসে স্যারের রুমে আসতে আসতে বেজে গেল ৫টা ১০।নক করার পর স্যার ভেতরে যেতে বললেন।ভেতরে ঢোকার পর স্যারের প্রতিক্রিয়া ছিলঃ
"ও... তাহলে তুমিই ফোন করেছিলে? এবার বুঝতে পেরেছ তো, সমস্যাটা কার? সময়ের সমস্যা তোমার থাকতে পারে, আমার নেই।তুমি অন্যকে প্রশ্ন করার আগে অবশ্যই নিজের অবস্থানটা একবার যাচাই করে নেবে।" পুরোটা সময় আমার জ্বী স্যার হ্যাঁ স্যার সরি স্যার ছাড়া কিছুই বলার ছিলনা।তারপর স্যার জিজ্ঞেশ করলেন "এবার বল কেন এসেছ"। আমি বললাম "স্যার রেজিস্ট্রেশনের জন্য"। স্যার বললেন ওটা ডিপার্টমেন্টাল হেড বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। ঠিক আছে, এবার তুমি আসতে পারো।

এরপর দুটি টার্ম নির্বিঘ্নে পার হলো।তারপর ৩/১ এর অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের পর স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম।যথারীতি প্রথমদিন স্যার রুমে নেই।কিন্তু ভাগ্য ভালো সেবার স্যার গরু ছাগলদের জন্য সময় বরাদ্দ দিয়ে রেখেছিলেন, পরদিন আর তার পরদিন অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন বিকাল ৪টা-৫টা।কিন্তু দ্বিতীয় দিন বিকাল ৪টা ১৫ থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও স্যারকে রুমে পেলাম না।এর আগের বার স্যারকে ফোন করার দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে আর ফোন করারও সাহস পেলাম না।পরদিন বিকেল ৪টা থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরও যখন স্যারকে রুমে পেলাম না, তখন ফোন করতে বাধ্য হলাম।সেদিন আর স্যার রাগারাগি করলেন না, কেননা স্যারই তো সময় দিয়ে রেখেছিলেন।তবুও স্যারের কাছে ব্যাপারটি ছিল অপমানজনক, এর প্রতিশোধ স্যার পরে নিয়েছিলেন। তখন স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছিল আমার সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে প্রায় ১০ জনের মতো।স্যার সবাইকে জিজ্ঞেশ করলেনঃ "তুমি ফোন দিয়েছিলে?"অবশেষে যখন আমাকে জিজ্ঞেশ করে জানতে পারলেন আমিই ফোন করেছিলাম, তখন স্যার ছোট্ট একটা ক্রুর হাসি দিয়েছিলেন, যে হাসির মর্মার্থ আমি বুঝতে পেরেছিলাম মাস দুই/তিনেক পরে।


সে কাহিনী পরের পর্বে বলবো।

No comments:

Post a Comment