ক্ষ্যাত(তুচ্ছার্থে) বা ক্ষেত বলতে শুদ্ধ বাংলায় সাধারনত চাষের উপযোগী ভূমিকে বোঝানো হয়।তবে প্রচলিত বাংলায়, বিশেষ করে আধুনিক প্রজন্মের কাছে ক্ষ্যাত শব্দের অর্থটি আবার অন্যরকম।আধুনিক প্রজন্ম ক্ষ্যাত বলতে বুঝিয়ে থাকে এক শ্রেনীর লোককে যারা ক্ষেতে কাজ করে অর্থাৎ "চাষাভুষা"দের মতো নিরক্ষর, আনস্মার্ট, অভদ্র ইত্যাদি গুনাবলি সম্পন্ন।
তবে ক্ষ্যাত শব্দটির গুনগত অর্থটি বোধ হয় কিছুটা পাল্টে যেতে বসেছে, অথবা আমি ক্ষ্যাত শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে অর্থের এই পরিবর্তনটি আগে বুঝতে পারিনি।আজকাল ক্ষ্যাত বলতে এক শ্রেনীর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাকে(ব্যাপারটি আর এখন নতুন প্রজন্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই) বুঝানো হচ্ছে, যারা হিন্দি ভাষা জানেনা বা কিঞ্চিত জানলেও স্বচ্ছন্দে হিন্দিতে কথা বলতে পারেনা।
এই ক্ষ্যাত শ্রেনীর আরো কয়েকটি বৈশিষ্ট আছে।তার মধ্যে রয়েছেঃ
১।এরা গুনে ও মাণে অনন্য, স্বকীয় বৈশিষ্টে সমুজ্বল,পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর(গ্ল্যামারাস) নর-নারী কর্তৃক অভিনীত অনন্যসাধারন কাহিনীসমৃদ্ধ হিন্দি ছবির রস আস্বাদনে অক্ষম।এই ক্ষ্যাত শ্রেনী বলে কিনা, হিন্দি ছবি বস্তাপচা, নকল কাহিনী সমৃদ্ধ।স্পর্ধার বলিহারি !!!
২।এরা সর্বদা দামী কাপড়চোপড় ও অলঙ্কার পরিহিত(এমনকি ঘুমের সময়ও) নর-নারী কর্তৃক অভিনীত, পরকীয়ার মতো মহান প্রেম সহজভাবে উপস্থাপনকারী হিন্দি সিরিয়ালের রস আস্বাদনেও অক্ষম। এরা বলে থাকে, ওখানে নাকি এক কথা বারবার করে বলা হয়, এক দৃশ্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বারবার দেখানো হয়, সামান্য কাহিণী টেনে টেনে লম্বা করা হয়। সুশীল সমাজ যে এদের সাথে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, দোষটা কি সুশীল সমাজের? নাকি এইসব অসভ্য বর্বরদের?
৩।এরা খুব সাধারন হিন্দি প্রশ্ন, যেমন "কিয়া হুয়া দোস্ত?" বা "কিয়া কারেগা দোস্ত?" ইত্যাদি প্রশ্নের জবাবও এরা সহজ, প্রাঞ্জল হিন্দি ভাষায় দিতে পারেনা বরং চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। রাবিশ!!!!!
৪।প্রায় ঐশ্বরিক একটি জগৎ, অর্থাৎ বলিউড থেকে আগত সম্মানিত মেহমানদের সাথে কি করে কথা বলতে হয়, সেটাও এরা জানেনা।এরা বলিউড জগতের কর্তা, কর্ত্রীদের সাথে হিন্দিতে কথা বলতে না চাওয়ার মতো আস্পর্ধা দেখায়।এদের যে স্টেজ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে, তাতে অবাক হওয়ার কি আছে? লাথি দিয়ে যে ফেলে দেয়া হয়নি, সেটাই কি কম নয়? বাবা মা কি এদের সামান্য হিন্দিটুকুও শেখাননি?
কিন্তু আর নয়। এই অর্বাচীন শ্রেনীর কার্যকলাপ সমস্ত সভ্যতা ভব্যতার সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে।এরা এমনকি ভিনদেশী মেহমানের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে ঘৃনা প্রকাশ করেছে।এখনি সময় এই ক্ষ্যাত শ্রেনীর রাশ টেনে ধরার।
এখন থেকে দেশের প্রতিটি পাঠ্যশালায় হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে।আগামী ছয় মাস পর দেশের প্রতিটি নাগরিকের হিন্দিতে কথা বলার ক্ষমতা যাচাই করা হবে।কেউ যদি এই সময়ের মধ্যে হিন্দি শিখতে ব্যার্থ হন, তাহলে তাকে ঐ অর্বাচীনটির মতো করে দেশ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হবে।দেশের পথেঘাটে কাওকে হিন্দির বদলে বাংলা বলতে শুনলে "বিশেষ ভাষা আইন-২০১০" এর আওতায় ৬ মাসের কারাদন্ড দেয়া হবে।
ততোধিক দুঃখ ও পরিতাপের সাথে জানাচ্ছি, আমিও এই "ক্ষ্যাত" শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত।কাজেই আমি বর্তমানে দেশ ও সমাজ থেকে বহিষ্কৃত হবার আশংকায় আছি।
No comments:
Post a Comment